হিরামন তােতার কাহিনী । ঠাকুমার ঝুলি গল্প । মজার মজার রুপকথার গল্প পর্ব ২

 মজার মজার রুপকথার গল্প পর্ব ২

দেখবে তােমার আর কোনও দুঃখ থাকবে না, আর কষ্ট করে তােমাকে কাঠ কাটতেও হবে না। 

হিরামন তােতার কথা শুনে বৃদ্ধ কাঠুরের চোখে জল এসে গেল। বৃদ্ধ কাঠুরে হিরামন তােতাকে নিয়ে গেল রাজার কাছে। 

মহারাজ তার হারানাে হিরামনকে ফিরে পেয়ে আনন্দে আত্মহারা হয়ে গলেন। বৃদ্ধ কাঠুরেকে প্রতিশ্রুতি মতাে পুরস্কার দিয়ে বিদায় দিলেন। 

তারপর মহারাজ হিরামন তােতাকে একসময় কাছে পেয়ে জিজ্ঞেস করলেন, ‘সােনা পাখি তুমি আমাকে ছেড়ে কোথায় চলে গিয়েছিলে? 

হিরামন তােতা তখন মহারাজের ছয় রানির সমস্ত কথা মহারাজকে বলল। আরও বলল, মহারাজ, আপনার ওই ছয় রানি আসলে মানবী নয়, রাক্ষসী।

মহারাজ বললেন, আমার আর কিছুই ভাল লাগছে না হিরামন। আমি কেমন যেন একটা হয়ে গেছি। 

‘ও, এই কথা, তার জন্য এত ভেঙে পড়ার কী আছে? আপনার মনােমতাে মানুষ আমি আগে থেকেই ভেবে রেখেছি, আমি নিয়ে আসব আমাদের নতুন রানিমাকে।

হিরামনের কথায় মহারাজের মন আনন্দে ভরে উঠল। ব্যস্ত হয়ে বললেন তিনি, কে সে হিরামন, কোথায় থাকে সে? 

‘সাত সমুদ্র তেরাে নদীর ও পারে, আমি আপনাকে নিয়ে যাব সেই স্বর্ণকেশী গৌরবর্ণা রূপবতী রাজকন্যার কাছে। তবে একটা শর্ত আছে।' 

কী শর্ত হিরামন? আমি যে-কোনও শর্তের জন্য তৈরি। 

মহারাজ, আমার প্রথমে প্রয়ােজন একটি পক্ষীরাজ ঘােড়া। পক্ষীরাজ ঘােড়ায় চড়ে আমরা অল্প সময়ের মধ্যেই সেখানে পৌঁছে যাব। এক্ষুনি। আমার একটা পক্ষীরাজ ঘােড়া চাই।

মহারাজ অবাক হয়ে বললেন, ‘পক্ষীরাজ ঘােড়া! সে আমি কোথায় পাব হিরামন? 

আমার আস্তাবলে অনেক ঘােড়া আছে, তুমি তার মধ্যে থেকে যে কোনও একটা ঘােড়া বেছে নাও। 

হিরামন বলল, “ঠিক আছে, আস্তাবলে চলুন। 

মহারাজ হিরমনকে নিয়ে আস্তাবলে গেলেন। হিরামন সারি সারি ঘােড়া পরখ করে দেখে একটা ঘােড়ার সামনে দাড়িয়ে বলল, “মহারাজ, এই ঘােড়ায় করেই আমাদের যেতে হবে। পক্ষীরাজ এই একাংশ আপনার আস্তাবলে।

হিরামনের কথায় মহারাজ বিরক্ত হয়ে বললেন, ' দিন দিন তোমার মাথা খারাপ হচ্ছে হিরামন। আস্তাবলে এত সুন্দর সুন্দর ঘােড়া থাকতে তুমি কিনা পছন্দ করলে একটা অর্ধমৃত ঘােড়াকে। এখন ' দেখছি আমার ছয় রানী ঠিকই বলেছিল, পাখির কথা শুনে কাজ করলে একদিন আপনাকে বিপদে পড়তে হবে। তােমার কথা শুনে আমার ছয় রানিকে হত্যা করা ডাচত হয়নি দেখছি।

মহারাজের কথায় হিরামন তােতা একটুও বিচলিত হল না, বরং মিষ্টি গলায় বলল, মহারাজ আপনি আপনার শর্ত থেকে কিন্তু দূরে সরে যাচ্ছেন। আপনি কিন্তু বলেছিলেন আমার নির্দেশ অনুযায়ী কাজ করবেন। কোনও সময়ই প্রতিবাদ করবেন না। আপনি যে ঘােড়াটিকে অর্ধমৃত বলে তাচ্ছিল্য করছেন, এটাই আসলে পক্ষীরাজ। অনাহারে অযত্নে এর চেহারা এত খারাপ হয়ে গিয়েছে। এর জন্য দায়ী আপনার আস্তাবলের রক্ষকরা। মহারাজ, কথায় আছে-জহুরি রত্ন চিনতে ভুল করে না। আপনি আমার - কথা মেনে এই অর্ধমৃত ঘােড়াটিকে তিন মাস একটা নতুন পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন আস্তাবলে রেখে ভাল খাবার দিন, দেখবেন তিন মাস পরে, আপনি এই ঘােড়াকে আর চিনতে পারছেন না। 

মহারাজের মনে পড়ে গেল-তাই তাে, হিরামনের সঙ্গে শর্ত হয়েছিল, হিরামন যা বলবে তিনি ঠিক তাই তাই পালন করবেন। 

মহারাজ অনুতপ্ত কণ্ঠে বললেন, “আমারই ভুল হয়েছে হিরামন। এখন থেকে তােমার কথামতাে চলব। আর আজই এই ঘােড়ার জন্য আমি নতুন আস্তাবল তৈরি করে এর পরিচর্যার ব্যবস্থা করছি।' 

তিন মাস ধরে মহারাজ দিন-রাত ওই ঘােড়ার যত্নআত্তি করালেন। সময়মতাে দানা খাওয়ালেন। তাতে করে মহারাজ নিজেই অবাক হয়ে গেলেন। মনে মনে ভাবলেন, হিরামন তাে ঠিকই বলেছে, বাস্তবিকই ঘােড়াটি অনেক উচ্চমানের। 

হিরামন তিন মাস পর ঘােড়া দেখে বলল, “মহারাজ, এবার ঘােড়া। আমাদের সাত সমুদ্র তেরাে নদী পার করার উপযুক্ত হয়েছে। এবার আমাদের দরকার এক ঝুড়ি চাদির মটর। মহারাজ হিরামরের আদেশমতাে এক ঝুড়ি চাঁদির মটর হিরামনকে দিলেন। 

একদিন সকালে সূর্য ওঠার আগে হিরামন মহারাজের ঘুম ভাঙিয়ে বলল, মহারাজ, তৈরি হয়ে নিন। আজ আমরা সেই রাজকন্যার উদ্দেশে যাত্রা করব।

মহারাজ হিরামনের আদেশমতাে তৈরি হয়ে নিলেন। চাদির মটরের ঝুড়ি ঘােড়ার গলায় ঝুলিয়ে দিতে বলল, হিরামন। তারপর হিরামন বলল, মহারাজ, আপনি দয়া করে চাবুক নিয়ে ঘােড়ার পিঠে উঠে বসুন, আমি আপনার কাঁধের ওপর বসছি। আর একটা কথা, খুব মন দিয়ে শুনুন, ‘ঘােড়ার গায়ে একবার মাত্র চাবুক মেরে বলবেন- সত্যিই যদি তুমি পক্ষীরাজ ঘােড়া হও তবে আমাকে এক্ষুনি পৌছে দাও সাত সমুদ্র তেরাে নদীর পারে সেই রূপবতী কন্যার প্রাসাদে। দেখবেন মহারাজ, একবাররের বেশি কিন্তু ঘােড়াকে চাকুক মারবেন না, তাহলে কিন্তু সব গণ্ডগােল হয়ে যাবে। 

হিরামনের কথামতাে মহারাজ ঘােড়ায় চেপে বসে ঘােড়ার গায়ে কষে একবার চাবুক মেরে বললেন, সত্যিই যদি তুমি পক্ষীরাজ ঘােড় হও তবে আমাদের পৌছে দাও সাত সমুদ্র তেরাে নদীর পারের সেই রূপবতী কন্যার প্রাসাদে।

যেমনি বলা অমনি পক্ষীরাজ ঘােড়া মহারাজও হিরামনকে নিয়ে সাঁই - সই করে উড়ে চলল আকাশ পথে, কয়েক মুহুর্তের মধ্যে পেরিয়ে গেল  সাত সমুদ্র তেরাে নদী। মহারাজ এবং হিরামনকে নামিয়ে দিল রাজপ্রাসাদের কাছের এক বটবৃক্ষের ছায়ায়। 

এদিকে বিকেল গড়িয়ে সন্ধে হয়ে গেল। হিরামনের পরামর্শমতাে মহারাজ ঘােড়াটিকে বটবৃক্ষের নীচে বেঁধে রেখে নিজে গাছে চড়ে বসলেন। 

হিরামন বলল, “মহারাজ, আপাতত আপনার কাজ শেষ। এবার আমার কাজ শুরু।'-এই বলে হিরামন ঝুড়ি থেকে একটা একটা করে চাদির মটর দয়ে সুন্দরী কন্যা যে ঘরে শুয়ে আছেন সেই ঘর থেকে বটবৃক্ষ পর্যন্ত একটা সুন্দর নকশা তৈরি করল। এই নকশা করতে-করতেই রাত কেটে গেল। ভােরবেলা রূপবতী কন্যার পরিচারিকা ঘরের দরজা খুলে দেখে চাদির মটরদানা সারি সারি পড়ে আছে। দিনের আলােয় সেগুলাে সব ঝলমল করছে। সঙ্গে সঙ্গে সে ডেকে তুলল রূপবতী কন্যাকে। রাজকন্যা প্রথমে অবশ্য বিশ্বাস করেনি। ঘরের বাইরে এসে পা রেখে অবাক হয়ে গেল। সত্যি-সত্যিই চাদির মটরদানা পড়ে আছে। রাজকন্যা একটা একটা করে চাদির মটরদানা তুলতে লাগল। মটরদানা তুলতে তুলতে একসময় পৌছে গেল বটবক্ষের কাছে। 

হিরামন সঙ্গে সঙ্গে মহারাজের কানের সামনে মুখ নিয়ে বলল, মহারাজ, এই সুযােগে রাজকন্যাকে ঘােড়ার পিঠে তুলে চাবুকের এক ঘা মেরে পক্ষীরাজকে বলুন আপনার প্রাসাদে পৌঁছে দিতে। 

যেমন বলা তেমনই কাজ। মহারাজ এক লাফে গাছ থেকে নেমে রাজকন্যাকে তুলে নিলেন পক্ষীরাজ ঘােড়ার পিঠে। চাবুকের এক ঘা দিয়ে বললেন, সত্যি যদি তুমি পক্ষীরাজ হও তবে আমাদের খুব তাড়াতাড়ি আমার প্রাসাদে নিয়ে চলাে।

হিরামন মহারাজের কাঁধে চেপে বসল, পক্ষীরাজ সাঁই সাঁই করে আকাশের বুকে উঠে গেল। মহারাজ মনে মনে হিরামনকে ধন্যবাদ দিতে লাগলেন। রাজকন্যা পেয়ে রাজার মনে দুবুদ্ধি জেগে উঠল, মহারাজের মনে হচ্ছিল পক্ষীরাজ ঘােড়া খুব তাড়াতাড়ি চলছে না, সঙ্গে সঙ্গে তিনি আবার পক্ষীরাজের গায়ে চাবুকের আঘাত করলেন। 

হিরামন রাজার কাণ্ড দেখে আতঙ্কে চিৎকার করে বলল, এ কী করলেন। মহারাজ! হিরামনের কথা শেষ হওয়ার আগেই পক্ষীরাজ ঘােড়া মহারাজকে নিয়ে মুখ থুবড়ে এক জঙ্গলে পড়ল। এ রকম ঘটনায় মহারাজ হতবুদ্ধি হয়ে গেলেন। 

হিরামন মাথায় হাত দিয়ে বলল, “মহারাজ, এবার তিন মাস এই গভীর সঙ্গলে অপেক্ষা করুন। আগের মতাে এই ঘােড়ার যত্নআত্তি না করলে এ আর পক্ষীরাজের মতাে উড়তে পারবে না। 

মহারাজ মাথায় হাত দিয়ে নিজের নির্বুদ্ধিতার জন্য আফসােস করতে লাগলেন। এমন সময় একদল শিকারি সেখানে উপস্থিত হল, তাদের মধ্যে আমার সেই দেশের রাজপুত্রও ছিল। রাজপুত্র এই গভীর জঙ্গলে রূপবতী কন্যাকে দেখে মুগ্ধ হয়ে গেল। 

রাজকন্যার সামনে গিয়ে রাজপুত্র বলল, “আমি তােমাকে বিয়ে করতে চাই। 

মহারাজ পাশে বসে রাজপুত্রের এ-ধরনের কথা শুনে তেলেবেগুনে জ্বলে উঠলেন। হুঙ্কার দিয়ে বললেন, কী! এতবড় কথা? সাত সমুদ্র তেরাে নদী পার করে তবে আমি এই রাজকন্যাকে নিয়ে এসেছি। আর তুমি বাপু কোথাকার কে হে?'

বীরদর্পে রাজপুত্র বলল, আমি এই রাজ্যের একমাত্র উত্তরাধিকারী আর আমি যা বলি তাই করি। বিনা যুদ্ধে যদি তুমি এই সুন্দরী কন্যাকে আমার হাতে তুলে দিতে না পারাে, তবে আমার সঙ্গে যুদ্ধ করাে।'

মহারাজ রাজপুত্রের প্রস্তাবে রাজি হয়ে গেলেন। শুরু হল যুদ্ধ। সে কী ভয়ানক যুদ্ধ! তাদের হুঙ্কারে পশুপক্ষীরা পালাতে লাগল। রাজকন্যা পাশে দাঁড়িয়ে যুদ্ধ দেখছিল আর মনে মনে আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করছিল, মহারাজ যেন জয়ী হয়। দীর্ঘ সময় যুদ্ধ করার পর রাজপুত্র মাহরাজের কাছে অবেশেষে হেরে যাচ্ছিল। রাজকন্যার মুখে সেইসময় হাসি ফুটে উঠল। কিন্তু হঠাৎ একটা অঘটন ঘটে গেল। অতর্কিতেই ঘটে গেল ঘটনাটা। রাজপুত্রের দুই অনুচর রাজপুত্রের পরাজয় দেখে ঝাপিয়ে পড়ল মহারাজের ওপর। মহারাজ তিনজনের সঙ্গে যুদ্ধ করে পারবেন কী করে, একে তাে বেশ কিছুদিন অনাহারে কাটিয়েছেন, তারপর এতটা পথ অতিক্রম করে ক্লান্ত হয়ে পড়েছেন। মহারাজ ওদের সঙ্গে যুদ্ধে হেরে গেলেন। রাজপুত্র মহারাজকে প্রাণে মারল না। মহারাজের দু’চোখ অন্ধ করে সে রাজকন্যা এবং পক্ষীরাজ ঘােড়াটিকে নিয়ে প্রাসাদে ফিরে গেল । প্রাসাদে ফিরে রাজপুত্র বলল, সুন্দরী আজই আমি তােমাকে বিয়ে করতে চাই।

রাজকন্যা কিন্তু মহারাজকেই বেশি পছন্দ করেছিল। কিন্তু এ-কথা যদি রাজপুত্র জানতে পারে, রাজকন্যার মনে হল, তাকে হয়তাে বন্দি করে। কারাগারে নিক্ষেপ করবে। বুদ্ধিমতী রাজকন্যা হেসে বলল, রাজপুত্র, তােমার বীরত্বে আমি মুগ্ধ। তবে এক বছরের মধ্যে আমি তােমাকে বিয়ে করতে পারব না। আমি একটা ব্রত পালন করছি। শেষ হতে মাত্র এক বছর বাকি। তারপর তােমাকে আমি বিয়ে করব। আর এই একটি বছর কোনও পুরুষের মুখদর্শন পর্যন্ত করব না। শুধুমাত্র এই অর্ধমৃত ঘােড়াটি আমার কাছে থাকবে।

রাজপুত্র রাজকন্যার রূপে এতই মুগ্ধ হয়েছিল যে, মনে মনে ভাবল, একটা তাে বছর, দেখতে দেখতে কেটে যাবে। রাজকন্যার ইচ্ছে অনুসারে রাজপুত্র রাজকন্যার জন্য আলাদা একটা প্রাসাদ তৈরি করে দিল। রাজকন্যা সেই প্রাসাদে পক্ষীরাজ ঘােড়াটিকে সুস্থ করে তােলার জন্য যত্নআত্তি করতে লাগল । হিরামন তােতা তাে বলেছেই, তিন মাস সেবা করলেই পক্ষীরাজ আবার আগের মতাে চলতে পারবে। 

এক-এক করে দিনগুলাে কেটে যাচ্ছে। আর এদিকে রাজকন্যা মহারাজের কথা ভেবে ভেবে অস্থির হয়ে পড়ছে। কোথায় আছেন মহারাজ, আর হিরামনই বা কী করছে? রাজকন্যা প্রতিদিন বিকেলে প্রাসাদের ছাদে উঠে আকাশের চারিদিকে হিরামনের খোঁজ করত, ছাদের ওপর বাটিতে করে পাখিদের জন্য খাবার রেখে দিত। যদি হিরামন খাবারের সন্ধান করতে করতে এই প্রাসাদে এসে পড়ে! 

এদিকে মহারাজকে নিয়ে জঙ্গলে হিরামন তােতা পড়েছে মহা ফ্যাসাদে। সারাদিন ঘুরে ঘুরে হিরামন ফল সংগ্রহ করে মহারাজকে খেতে দেয়। ছােট ছােট ফলে কি আর মহারাজের পেট ভরে? দিনে দিনে মাহরাজের চেহারা ভেঙে যাচ্ছিল। 

একদিন জঙ্গলের একদল পাখি হিরামনকে ডেকে বলল, হিরামন, সারাদিন হন্যে হয়ে ঘুরে ক’টা ফল পাবে? আমাদের সঙ্গে গেলে অনেক খাবার পাবে!’ 

শিক্ষনীয় মজার গল্প, সেরা রূপকথার গল্প, গোপাল ভাঁড়ের গল্প, পুরানো মজার গল্প, গল্প গল্প, রূপকথার রাজকন্যার গল্প, ভালো গল্প, শিয়ালের গল্প,


হিরামন জিজ্ঞেস করল, ‘কোথায় যেতে হবে? ‘এই রাজ্যের রাজপ্রাসাদে। প্রাসাদের কাছেই একটা সুন্দর বাড়ি আছে, সেই বাড়ির রাজকন্যা প্রতিদিন সকাল-বিকেল আমাদের জন্য ছাদে অনেক খাবার রেখে দেয়। তুমি যাবে সেখানে? 

হিরামন রাজি হয়ে গেল। পরদিন সকালে অন্যান্য পাখিদের সঙ্গে উপস্থিত হল সেই বাড়িতে। সত্যি সত্যিই হিরামন দেখল বাড়ির ছাদে পাখিদের জন্য অনেক খাবার রেখে দিয়েছে। হিরামন ছাদের একপাশে সুন্দরী কন্যাকে গালে হাত দিয়ে বসে থাকতে দেখে চমকে উঠল। মনে মনে ভাবল- আরে এ যে সেই রাজকন্যা। সঙ্গে সঙ্গে হিরামন রাজকন্যার কাছে গিয়ে বলল, কী গাে তুমি আমায় চিনতে পারছ?'

হিরামনের গলা শুনে রাজকন্যা তাকাল, এর জন্যই তাে রাজকন্যার প্রতীক্ষা। রাজকন্যা হিরামনকে হাতে তুলে নিয়ে আদর করতে করতে বলল, “হিরামন, মহারাজের খবর কী?

মহারাজের কথায় হিরামন বিষন্ন সুরে বলল, ভাল নেই রাজকন্যা। দিনে দিনে শরীর ভেঙে পড়ছে। খাওয়াদাওয়া প্রায় ছেড়ে দিয়েছেন বললেই হয়, মহারাজের চোখটাও নষ্ট হতে বসেছে।

রাজকন্যা হিরামনকে সান্ত্বনা দিয়ে বলল, এবার আমি যা বলব মন দিয়ে শােনাে, সাত সমুদ্র তেরাে নদী পেরিয়ে আমাদের প্রাসাদের পাশেই একটা বড় গাছ আছে। সেই গাছে বাস করে এক বিহঙ্গম ও বিহঙ্গমী, তুমি তাদের তাজা বিষ্ঠা এনে যদি রাজার চোখে লাগিয়ে দিতে পারাে, মহারাজ আবার তার চোখ ফিরে পাবেন।

রাজকন্যার পরামর্শ অনুযায়ী হিরামন সাত সমুদ্র তেরাে নদী পেরিয়ে বিহঙ্গম-বিহঙ্গমীর তাজা বিষ্ঠা নিয়ে এসে মহারাজের চোখে দেওয়ামাত্র চোখ ভাল হয়ে গেল। 

মহারাজ চোখ ফিরে পেয়ে হিরামন এবং রাজকন্যাকে মনে মনে ধন্যবাদ দিতে লাগলেন। 

তারপর মহারাজ হিরামনকে বললেন, “হিরামন, তােমার কথা না শুনে, আজ আমার এই দুর্দশা। এবার বলাে আমি কী করব? 

হিরামন মহারাজের কানের কাছে মুখ নিয়ে ফিস ফিস করে বুদ্ধি দিল। পরদিন সকালে হিরামনের পরামর্শ অনুযায়ী মহারাজ নিজের রাজ পোশাক ত্যাগ করে হেঁড়া ময়লা কাপড় পরে নিলেন। চাকরের পশাকে মহারাজ গেলেন সেই সুন্দরী কন্যার প্রাসাদে। সুন্দরী মহারাজকে দেখেই চিনতে পেরেছিল । 

মহারাজ রাজমাতার দর্শনপ্রার্থী হয়ে বললেন, রানিমা, অনেকদিন না খেয়ে আছি। যদি আপনার প্রাসাদে কাজের একটা ব্যবস্থা হয় তবে দু'বেলা দু'মুঠো খেতে পারব ।

রাজমাতার মন ছিল খুব সাদাসিধে। তিনি বললেন, আহা বাছা না খয়ে আছাে, ঠিক আছে আজ থেকে তুমি আমার প্রাসাদেরই ঘরদোর পরিষ্কার করাে।' 

হিরামনের পরিকল্পনা সফল হল। মহারাজের ওপর রানিমা নির্দেশ দিলেন ভাবী পুত্রবধূকে দেখাশােনা করা আর প্রাসাদের ঘরদোর পরিষ্কার করে রাখা।

এইভাবে বেশ কিছুদিন কেটে গেল। একদিন হিরামন মহারাজ এবং সুন্দরী কন্যাকে চুপিচুপি বলল, “মহারাজ, পক্ষীরাজ ঘােড়া সম্পূর্ণ সুস্থ। আগামীকাল সূর্য ওঠার আগেই আমাদের এই প্রাসাদ ত্যাগ করে চলে যেতে হবে।' 

পরদিন ভােরে কাকপক্ষী টের পাওয়ার আগেই মহারাজ সুন্দরী কন্যাকে নিয়ে পক্ষীরাজ ঘােড়া চেপে বললেন, তুমি যদি সত্যিকারের পক্ষীরাজ ঘােড়া হও তবে আমার প্রাসাদে পৌছে দাও।'

এই বলে মহারাজ পক্ষীরাজের গায়ে চাবুকের আঘাত করলেন। সঙ্গে সঙ্গে পক্ষীরাজ রাজপ্রাসাদ ত্যাগ করে সাঁই সাঁই করে আকাশের বুকে মেঘের আড়ালে ভেসে চলল।

সূর্য ডােবার অনেক আগেই মহারাজ সুন্দরী কন্যাকে নিয়ে পৌঁছে। গেলেন নিজের প্রাসাদে। তারপর শুভ দিন দেখে রাজকন্যার সঙ্গে মহারাজের বিয়ে হয়ে গেল। বাকি জীবন মহারাজ সুন্দরী রাজকন্যাকে নিয়ে সুখেই কাটাতে লাগলেন। একদিন মহারাজ হিরামন তােতাকে বললেন, ‘হিরামন, আজ যা কিছু আমার হয়েছে, যা কিছু পেয়েছি, সবই তােমার অবদান। তাই তােমার কাছে আমার একান্ত অনুরােধ, তুমি জন্ম জন্মান্তর আমার চিরসাথী হয়ে থেকো। 

...সমাপ্ত...

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ