অচিন পুর হুমায়ূন আহমেদ pdf download

হুমায়ূন আহমেদ বই pdf, হুমায়ূন আহমেদ গল্প সমগ্র, বিভিন্ন লেখকের বই, ফেরা হুমায়ূন আহমেদ pdf, হুমায়ূন আহমেদের শ্রেষ্ঠ গল্প, মৃত কাঠগোলাপ বই pdf, আয়নাঘর হুমায়ুন আহমেদ pdf download, হুমায়ুন আহমেদের গল্প,


  • বইয়ের নামঃ অচিন পুর pdf বই ডাউনলোড
  • লেখকঃ হুমায়ূন আহমেদ
  • বইয়ের ভাষাঃ বাংলা
  • বইয়ের পৃষ্টাঃ ৪৫
  • বইয়ের ফাইলঃ ৫ এমবি পিডিএফ (PDF)

দুই পৃষ্টা পড়ে দেখুনঃ-

মরবার পর কী হয়?

আট-ন' বছর বয়সে এর উত্তর জানবার ইচ্ছে হল। কোনো গূঢ় তত্ত্ব নিয়ে চিন্তার বয়স সেটি ছিল না, কিন্তু সত্যি সত্যি সেই সময়ে আমি মৃত্যুরহস্য নিয়ে ভাবিত হয়ে পড়েছিলাম।

সন্ধ্যাবেলা নবু মামাকে নিয়ে গা ধুতে গিয়েছি পুকুরে। চারিদিক ঝাপসা করে অন্ধকার নামছে। এমন সময়ে হঠাৎ করেই আমার জানবার ইচ্ছে হল, মরবার পর কী হয়? আমি ফিসফিস করে ডাকলাম, ‘নবু মামা, নবু মামা।' নবু মামা সাঁতরে মাঝপুকুরে চলে গিয়েছিলেন। তিনি আমার কথা শুনতে

পেলেন না। আমি আবার ডাকলাম, 'নবু মামা, রাত হয়ে যাচ্ছে।'

‘আর একটু।'

‘ভয় লাগছে আমার।'

একা একা পাড়ে বসে থাকতে সত্যি আমার ভয় লাগছিল। নবু মামা উঠে আসতেই বললাম, 'মরবার পর কী হয় মামা?' নবু মামা রেগে গিয়ে বললেন, 'সন্ধ্যা বেলা কী বাজে কথা বলিস?' নবু মামা ভীষণ ভীতু ছিলেন, আমার কথা শুনে তাঁর ভয় ধরে গেল। সে সন্ধ্যায় দু' জনে চুপি চুপি ফিরে চলেছি। রইসুদ্দিন চাচার কবরের পাশ দিয়ে আসবার সময় দেখি, সেখানে কে দু’টি ধূপকাঠি জ্বালিয়ে রেখে গেছে। দু'টি লিকলিকে ধোঁয়ার শিখা উড়ছে সেখানে থেকে। ভয় পেয়ে নবু মামা আমার হাত চেপে ধরলেন।

শৈশবের এই অতি সামান্য ঘটনাটি আমার খুব স্পষ্ট মনে আছে। পরিণত বয়সে এ নিয়ে আমি অনেক ভেবেছি। ছোট একটি ছেলে মৃত্যুর কথা মনে করে একা কষ্ট পাচ্ছে। এ ভাবতেও আমার খারাপ লাগত। সত্যি তো, সামান্য কোনো ব্যাপার নিয়ে ভাববার মতো মানসিক প্রস্তুতিও যার নেই, সে কেন কবরে ধূপের শিখা দেখে আবেগে টলমল করবে? কেন সে একা একা চলে যাবে সোনাখালি? সোনাখালি খালের বাঁধান পুলের উপর বসে থাকতে থাকতে এক সময় তার কাঁদতে ইচ্ছে হবে?

আসলে আমি মানুষ হয়েছি অদ্ভূত পরিবেশে। প্রকাও একটি বাড়ির অগুনতি রহস্যময় কোঠা। বাড়ির পেছনে জড়াজড়ি করা বাঁশবন। দিনমানেই শেয়াল ডাকছে চারিদিকে। সন্ধ্যা হব-হব সময়ে বাঁশবনের এখানে-ওখানে জ্বলে উঠছে ভূতের আগুন। দোতলার বারান্দায় পা ছড়িয়ে বিচিত্র সুরে কোরান পড়তে শুরু করেছে কানাবিবি। সমস্তই অবিমিশ্র ভয়ের।

আবছা অন্ধকারে কানাবিবির দুলে দুলে কোরান-পাঠ শুনলেই বুকের ভেতর ধক্ করে উঠত। নানিজান বলতেন, 'কানার কাছে এখন কেউ যেও না গো।' শুধু কানাবিবির কাছেই নয়, মোহরের মা পা ধোয়াতে এসে বলত, 'পুলাপান কুয়াতলায় কেউ যেও না।’ কুয়াতলায় সন্ধ্যাবেলায় কেউ যেতাম না। সেখানে খুব একটা ভয়ের ব্যাপার ছিল। ওখানে সন্ধ্যাবেলায় যেতে নেই।

চারিদিকেই ভয়ের আবহাওয়া। নানিজানের মেজাজ ভালো থাকলে গল্প ফাঁদতেন। সেও ভূতের গল্প : হাট থেকে শোল মাছ কিনে ফিরছেন তাঁর চাচা। চারিদিক অন্ধকার হয়ে এসেছে। শ্রাবণ মাস, বৃষ্টি পড়ছে টিপটিপ। ডিসট্রিক্ট বোর্ডের সড়ক ছেড়ে বাড়ির পথ ধরেছেন, ওমনি পেছন থেকে নাকী সুরে কে চেঁচিয়ে উঠল, 'মাঁছটা আমারে দিয়ে যাঁ।”

রাতের বেলা ঘুমিয়ে পড়া ছেলেমেয়েদের জাগিয়ে এনে ভাত খাওয়াত

মোহরের মা। লম্বা পার্টিতে সারি সারি থালা পড়ত। ঘুম-ঘুম চোখে ভাত মাখাচ্ছি, এমন সময় হয়তো ঝুপ করে শব্দ হল বাড়ির পেছনে। মোহরের মা খসখসে গলায় চেঁচিয়ে উঠল, ‘পেততুনি নাকি? পেততুনি নাকি রে?' নবু মামা প্রায় আমার গায়ের উপর হুমড়ি খেয়ে চাপা সুরে বলত, 'ভয় পাচ্ছি,

ও মোহরের মা, আমার ভয় লাগছে।' নানাজানের সেই প্রাচীন বাড়িতে যা ছিল, সমস্তই রক্ত জমাট-করা ভয়ের। কানাবিবি তার একটিমাত্র তীক্ষ্ণ চোখে কেমন করেই না তাকাত আমাদের দিকে। নবু মামা বলত, 'ঐ বুড়ি, আমার দিকে তাকালে কঞ্চি দিয়ে চোখ গেলে দেব।” কানাবিবি কিছু না বলে ফ্যালফ্যালিয়ে হাসত। মাঝেমধ্যে বলত, 'পুলাপান ডরাও কেন? আমি কিতা? পেত্নী?’ পেত্নী না হয়েও সে আমাদের কাছে অনেক বেশি ভয়াবহ ছিল। শুধু আমরা নই, বড়োরাও তাকে সমীহ করে চলতেন। আর সমীহ করবে নাই বা কেন? বড়ো নানিজানের নিজের মুখ থেকে শোনা গল্প।

তাঁর বাপের দেশের মেয়ে কানাবিবি। বিয়ের সময় সঙ্গে করে নিয়ে এসেছেন। ফাই-ফরমাস খাটে। হেসে-খেলে বেড়ায়। এক দিন দুপুরে সে পেটের ব্যথায় মরোমরো। কিছুতেই কিছু হয় না, এখন যায় তখন যায় অবস্থা। নানাজান লোক পাঠিয়েছেন আশু কবিরাজকে আনতে। আশু কবিরাজ এসে দেখে সব শেষ। বরফের মতো ঠাণ্ডা শরীর। খাটিয়ায় করে বয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য বাঁশ কাটতে লোক গেল। নানিজান মড়ার মাথার কাছে বসে কোরান পড়তে লাগলেন। অদ্ভুত ব্যাপারটা ঘটল ঠিক তখনই। আমার নানিজান ভয়ে ফিট হয়ে গেলেন। নানাজান আতঙ্কে চেঁচিয়ে উঠলেন, 'ইয়া মাবুদ, ইয়া মাবুদ', কারণ কানাবিবি সে-সময়ে ভালো মানুষের মতো উঠে বসে পানি খেতে চাচ্ছে। এর পর থেকে স্বভাব-চরিত্রে আমূল পরিবর্তন হল তার। দিনরাত নামাজ রোজা। আমরা যখন কিছু কিছু জিনিস বুঝতে শিখেছি তখন থেকে দেখছি, সে পাড়ার মেয়েদের তাবিজ-কবজ দিচ্ছে। সন্ধ্যা হতে না-হতেই দোতলার বারান্দায় কুপি জ্বালিয়ে বিচিত্র সুরে কোরান পড়ছে। ভয় তাকে পাবে না কেন?

এ তো গেল রাতের ব্যাপার। দিনের বেলাও কি নিস্তার আছে? গোল্লাছুট খেলতে গিয়ে যদি ভুলে কখনো পুবের ঘরের কাছাকাছি চলে গিয়েছি, ওমনি রহমত মিয়া বাঘের মতো গর্জন করে উঠেছে, 'খাইয়া ফেলুম। ঐ পোলা, কাঁচা খাইয়া ফেলামু। কচ কচ কচ।' ভয়ানক জোয়ান একটা পুরুষ শিকল দিয়ে বাঁধা। ব্যাপারটাই ভয়াবহ। বদ্ধ পাগল ছিল রহমত মিয়া, নানাজানের নৌকার মাঝি। তিনি রহমতকে স্নেহ করতেন খুব, সারিয়ে তুলতে চেষ্টাও করেছিলেন। লাভ হয় নি।

এ সমস্ত মিলিয়ে তৈরি হয়েছে আমার শৈশব। গাঢ় রহস্যের মতো ঘিরে রয়েছে আমার চারিদিক। আমি স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছি, অল্প বয়সের ভয়কাতর একটি ছেলে তার নিত্যসঙ্গী নবু মামার হাত ধরে ঘুমুতে যাচ্ছে দোতলার ঘরে। নবু মামা বলছেন, ‘তুই ভিতরের জানালা দু’টি বন্ধ করে আয়, আমি দাঁড়াচ্ছি বাইরে।” আমি বলছি, ‘আমার ভয় করছে, আপনিও আসেন।' মামা মুখ ভেংচে বলছেন, এতেই ভয় ধরে গেল।' টেবিলে রাখা হ্যারিকেন থেকে আবছা আলো আসছে। আমি আর নবু মামা কুকুরকুণ্ডলী হয়ে লেপ মুড়ি দিয়ে শুয়ে আছি। নবু মামা শুতে-না-শুতেই ঘুম। একা একা ভয়ে আমার কান্না আসছে। এমন সময় বাড়ির ভেতর থেকে হৈচৈ শোনা গেল। শুনলাম, খড়ম পায়ে খটখট করে কে যেন এদিকে আসছে। মোহরের মা মিহি সুরে কাঁদছে, আমি অনেকক্ষণ সেই কান্না শুনে একসময় ঘুমিয়ে পড়লাম। জানতেও পারি নি সে-রাতে আমার মা মারা গিয়েছিলেন।

সে-রাতে আমার ঘুম ভেঙেছিল ফজরের নামাজের সময়। জেগে দেখি বাদশা মামা চুপচাপ বসে আছেন চেয়ারে। আমাকে বললেন, 'আর ঘুমিয়ে কি করবি, আয় বেড়াতে যাই।' আমরা সোনাখালির খাল পর্যন্ত চলে গেলাম। সেখানে পাকা পুলের উপর দু' জনে বসে বসে সূর্যোদয় দেখলাম। প্রচণ্ড শীত পড়েছিল সে-বার। কুয়াশার চাদরে গাছপালা ঢাকা। সূর্যের আলো পড়ে শিশিরভেজা পাতা চকচক করছে। কেমন অচেনা লাগছে সবকিছু। মামা অন্যমনস্কভাবে বললেন, 'রঞ্জু, আজ তোর খুব
দুঃখের দিন। দুঃখের দিনে কী করতে হয়, জানিস?'

'না।'

‘হা হা করে হাসতে হয়। হাসলেই আল্লা বলেন, একে দুঃখ দিয়ে কোনো লাভ নেই। একে সুখ দিতে হবে। বুঝেছিস?’ 'বুঝেছি।'

'বেশ, তাহলে হাসি দে আমার সঙ্গে।'

এই বলে তিনি হো হো করে হেসে উঠলেন। বাদশা মামার খুব মোটা গলা ছিল। তাঁর হাসিতে চারিদিক গমগম করতে লাগল। আমিও তাঁর সঙ্গে গলা মেলালাম। বাদশা মামা বললেন, 'আজ আর বাসায় ফিরে কাজ নেই, চল শ্রীপুর যাই। সেখানে। যাত্রা হবে। আমি মহা খুশি হয়ে তাঁর সঙ্গে চললাম। কত দিনকার কথা, কিন্তু সব যেন চোখের সামনে ভাসছে।


বই ডাউনলোড করুনঃ

বইটি ডাউনলোড ক্লিক করা মাত্র ডাউনলোড শুরু হবে । বইটি ডাউনলোড করতে যে কোন সম্যসা হলে বা কোন বইয়ের pdf ফাইল Request থাকলে মেসেজ করে জানাবেন । বইয়ের pdf অনুমেদন থাকলে অব্যশয় আপলোড করা হবে, ইনশাআল্লাহ । 

ডাউনলোড করার সময় ৫ সেকেন্ড সময় লাগতে পারে । ডাউনলোড লিঙ্ক তৈরি হওয়ার জন্য । ধন্যবাদ ।


Download File

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ