দুই চোরের পুরানো মজার গল্প । ঠাকুমার ঝুলি । পর্ব ২

দুই চোরের মজার গল্প ২

আমরা দু'জনেই এখন তাহলে সুখী হলাম, কি বল? তোমার কাজটা আমার কাজের তুলনায় অনেক শক্ত, কতটা পথ হেঁটে তবে তোমাকে মাঠে যেতে হয়, কাল থেকে আমি গোরু নিয়ে মাঠে যাব, আর তুমি গাছের গোড়ায় জল দিও।'

অন্য চোরটি বলল, 'আমার কোনও আপত্তি নেই, তবে যাওয়ার সময় একটা খাটিয়া সঙ্গে করে নিয়ে যেও, তাতে করে গাছের নীচে ফুরফুরে হাওয়ায় খুব ভাল ঘুম হবে।'

পরদিন দু'জনে দু'জনের কাজ পালটে নিল। যে গাছের গোড়ায় গতকাল জল দিয়েছিল, সে আজ কাধে একটা খাটিয়া নিয়ে গোরুর রশি ধরে প্রফুল্ল মনে গান গাইতে গাইতে গোরু নিয়ে মাঠের পথে যাত্রা করল । আর অন্য চোরটি বালতি নিয়ে চাপা গাছের গোড়ায় জল দেওয়ার জন্য জল তুলতে গেল। দু'জনে দু'জনকে শায়েস্তা করতে পেরে মনে মনে বেশ খুশি হল। দু’জনেই নিজেকে খুব চালাক ভাবতে লাগল। যেচোর গাছের গোড়ায় জল দেওয়ার দায়িত্ব নিয়েছিল, সে একের পর এক বালতি করে গাছের গোড়ায় জল দিয়েই যেতে লাগল, রাক্ষুসে মাটির খিদে যেনে আর মেটে না, আর মনে মনে বন্ধু চোরটির উদ্দেশে গালাগাল দিতে লাগল। এইভাবে সারাদিন গাছের গোড়ায় জল দিয়ে এক সময় ক্লান্ত হয়ে গতদিনের চোরের মতো ঘরে ফিরে শয্যা নিল ।

শিক্ষনীয় মজার গল্প,রোমান্টিক হাসির গল্প,শিক্ষনীয় হাসির গল্প,হাস্যকর মজার গল্প,ছোটদের মজার রূপকথার গল্প,মজার হাসির গল্প,একটা খুব সুন্দর গল্প,ভালোবাসার ফানি গল্প,শিক্ষনীয় মজার গল্প,শিক্ষণীয় মজার গল্প,হাস্যকর মজার গল্প,পুরানো মজার গল্প,দারুন মজার গল্প,মজার হাসির গল্প,মজার ছোট গল্প,মজার গল্প পড়ব,


ওদিকে অন্য চোরটি মনের আনন্দে মাঠে গিয়ে গোরুর বাঁধন খুলে দিতেই বিপত্তি দেখা দিল, তিড়িং বিড়িং করে লাফাতে লাফাতে চোখের নিমেষে গোরু অদৃশ্য হয়ে গেল। চোর তখন মাথায় খাটিয়া নিয়ে এ-গলি ও-গলিতে গোরু খুঁজতে লাগল। তার এই কাণ্ডকারখানা দেখে পথচারীরা হাসতে হাসতে লুটিয়ে পড়ল। এইভাবে সারাদিন কেটে গেল, ভারী খাটিয়া নিয়ে ক্রমাগত হাঁটায় শরীরের প্রতিটি শিরায় উপশিরায় যন্ত্রণা হতে শুরু করল, দিনের শেষে গোরুর খোঁজ মিলল, চোর তখন হাঁফ ছেড়ে বাঁচল, ক্লান্ত দেহটাকে অতিকষ্টে টেনে নিয়ে এল ব্রাহ্মণের বাড়িতে। ফিইে বিছানা নিল। বিছানায় অন্য চোরাটিও শুয়ে ছিল, পরস্পর পরস্পরের মুখোমুখি হলে দু’জনেই একচোট হেসে নিল, দু'জনেই বুঝতে পারল দু'জন দু'জনকে বেশ ভাল ঠকিয়েছে।

এক চোর অন্য চোরকে বলছে, 'বাপের জন্মে এমন গরু দেখিনি। আজ আমাকে পাগল করে ছেড়েছে।'

অন্য চোরটি বলল, ‘গরুটা না হয় বদমাশ, কিন্তু ওই চাপাগাছের কথা বল তো? সারাদিনে কম করে পাঁচশো বালতি জল দিয়েছি, অথচ গোড়ায় জল দাঁড়ানো দূরের কথা, নিমেষের মধ্যে জল টেনে নিচ্ছে। আমার তখন মনে হচ্ছিল ওই চাঁপাগাচের তলায় হয়তো বিরাট বড় কোনও কুয়ো আছে। আমি ঠিক করেছি আর মাঝরাতে ব্রাহ্মণ যখন গভীর নিদ্রায় মগ্ন হয়ে পড়বে তখন গাছের তলাটা খুঁড়ে দেখব কী আছে? তুমি তখন আমার সঙ্গে থাকবে নাকি?’ এহেন প্রস্তাবে অন্য চোরটি সম্মতি জানাল, তারপর দুই চোর রাতের আহার শেষ করে শুয়ে পড়ল।

মধ্য রাতে দুই চোরের ঘুম ভেঙে গেল, গোটা বাড়ি নিস্তব্ধ, সবাই গভীর ঘুমে অচৈতন্য। দুই চোর চাপাতলায় উপস্থিত হয়ে মাটি খুঁড়তে লাগল। খুঁড়তে খুঁড়তে একসময় এক চোরের শাবলের আঘাতে ঠং করে আওয়াজ হল, সঙ্গে সঙ্গে চোরটি খোঁড়া বন্ধ করে বলল, 'কীসের আওয়াজ হল?' ওই চোরটি গর্তে হাত দিতেই একটা কলীসর অস্তিত্ব টের পেল। কলসিতে হাত ঢোকাতেই বুঝতে পারল, এ মোহার না হয়ে যায় না! নিজেকে সামলে নিয়ে বলল, 'ও কিছু না। একটা পাথরের গায়ে আঘাত লাগায় এমন শব্দ হয়েছে। চলো এখন গিয়ে শুয়ে পড়ি, বৃথা কষ্ট করে তো লাভ নেই।'

অন্য চোরটির মনে সন্দেহ হল, সে কিন্তু কিছু বলল না, শুধু বলল, ‘ঠিকই বলেছ ভাই, শুধু শুধু কষ্ট করে লাভ কী, চলো শুয়ে পড়ি।”

দুই চোর আবার শয্যায় নিল, দেখতে দেখতে যে চোরটি মোহরের কলসির অস্তিত্ব টের পেয়েছিল সে নাক ডেকে ঘুমোতে লাগল, অন্য চোরটি তার পাশে ঘাপটি মেরে শুয়ে ছিল। তখন দেখল তার বন্ধু গভীর নিদ্রায় মগ্ন তখন সন্তর্পণে দরজা খুলে চাপাগাছের গোড়ায় চলে এল, গর্তের মধ্যে হাত দিতেই একটা কলসির অস্তিত্ব টের পেয়ে ওপরে তুলতেই দেখল মোহর ভর্তি একটি কলসি। আনন্দে কলসি তুলে নিয়ে, মনে মনে ভাবল, একটা যখন পাওয়া গেছে, নিশ্চয়ই মাটির নীচে আরও থাকতে পারে। এই ভেবে চোরটি অনেকটা জায়গা নিয়ে খুঁড়তে লাগল। সত্যি-সত্যিই এক সময় পেয়ে গেল আর একটি মোহর-ভরা কলসি, তখন সেই চোর গর্তের মধ্যে মাটিচাপা দিয়ে মোহরভরা দুটি কলসি পুকুরপাড়ে পুঁতে রেখে ফিরে এল। এবং অন্য চোরটির পাশে শুয়ে ঘুমিয়ে পড়ল ।

অন্য চোরটির তখন ঘুম ভেঙে গেল । সে মনে মনে মতলব এঁটেই ছিল, ভোর রাতে মোহরের কলসি নিয়ে পালিয়ে যাবে। গাছতলার নীচে এসে আকাশ থেকে পড়ল, সর্বনাশ, গর্ত সব বোজানো, নতুন করে গর্ত খুঁড়ে মোহরের সন্ধান পেল না, তর মানে নিশ্চয়ই তার বন্ধুর কাজ। সঙ্গে সঙ্গে ঘরে ফিরে এল। তার বন্ধু তখন গভীর নিদ্রায় মগ্ন, সর্বাঙ্গ পরীক্ষা করে কিছুই পেল না, দেখল পায়ে কাদা লেগে আছে, তার মানে পুকুরের ধারেকাছে কোথাও রেখেছে। সেও সঙ্গে সঙ্গে চলে গেল পুকুর ধারে, চারদিকে খুঁজতে লাগল, কিন্তু কোথায় যে পুঁতে রেখেছে তা বুঝতে পারল না। পশ্চিমদিকের পাড়ে ভাল করে দেখতেই দেখতে পেল কাদামাটিতে পায়ের ছাপ। এক জায়গায় সদ্য মাটি খোড়ার নমুনা। সঙ্গে সঙ্গে সে সেখানে মাটি কুঁড়তে লাগল, অল্প সময়ের মধ্যেই পেয়ে গেল দুই কলসি...

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ