দুই চোরের পুরানো মজার গল্প । ঠাকুমার ঝুলি । পর্ব ৩

দুই চোরের মজার গল্প ৩

সঙ্গে সঙ্গে সে সেখানে মাটি কুঁড়তে লাগল, অল্প সময়ের মধ্যেই পেয়ে গেল দুই কলসি মোহর। আনন্দে আত্মহারা হয়ে গেল, আর একমুহূর্ত থাকা নয় এখানে! সঙ্গে সঙ্গে সে দুই কলসি মোহার আর ব্রাহ্মণের গোয়াল থেকে গোরু খুলে। নিয়ে চম্পট দিল।

সকালবেলা অন্য চোরটি ঘুম থেকে উঠে তার বন্ধু চোরকে বিছানায় না দেখতে পেয়ে কুকুরপাড়ে গিয়ে বুঝতে পারল তার সঙ্গী চোর তাকে ধোঁকা দিয়ে পালিয়েছে। আর এক মুহূর্ত ব্রাহ্মণের বাড়িতে থাকল না, ঊর্ধ্বশ্বাসে ছুটতে ছুটতে চলে এল বাজারে, জুতোর দোকান থেকে একজোড়া দামি জুতো কিনে সড়কপথ ধরে ছুটতে লাগল । অনেকটা পথ অতিক্রম করে সে তার সঙ্গীকে দেখতে পেল। সঙকপথ ধরে ব্রাহ্মণের গোরুর পিঠে দুটো কলসি চাপিয়ে তার বন্ধু নাচতে নাচতে চলেছে। সে তখন অন্য রাস্তা ধরে ছুটতে ছুটতে অনেকটা পথ এগিয়ে গেল, সড়কের মধ্যিখানে একপাটি জুতো ফেলে অন্য পাটি আরও খানিকটা দূরে সড়ক সংলগ্ন মাঠের বড় গাছের নীচে রেখে একটু দূরে লুকিয়ে রইল।

শিক্ষনীয় মজার গল্প,রোমান্টিক হাসির গল্প,শিক্ষনীয় হাসির গল্প,হাস্যকর মজার গল্প,ছোটদের মজার রূপকথার গল্প,মজার হাসির গল্প,একটা খুব সুন্দর গল্প,ভালোবাসার ফানি গল্প,শিক্ষনীয় মজার গল্প,শিক্ষণীয় মজার গল্প,হাস্যকর মজার গল্প,পুরানো মজার গল্প,দারুন মজার গল্প,মজার হাসির গল্প,মজার ছোট গল্প,মজার গল্প পড়ব,

ওদিকে দু’কলসি মোহার আর গরু নিয়ে যেতে যেতে হঠাৎ সে দেখতে পেল রাস্তার মধ্যিখানে এক পাটি নতুন জুতো, পায়ে গলাতেই দেখল তারই পায়ের মাপে। জুতোর পাটি তার খুব পছন্দ হয়ে গেল, মনে মনে ভাবল, দূর, ‘এই একপাটি জুতো নিয়ে আমার কী লাভ? দু' পাটি থাকলে কত না ভাল হত!’ যাই হোক, সে তখন একপাটি জুতো পথের ধারে ফেলে আবার চলতে লাগল। বেশ কিছুটা পথ অতিক্রম করার পর গাছের নীচে অন্য পাটি জুতো দেখে সে থমকে দাঁড়িয়ে পড়ল। আফসোসের সুরে বলল, 'যাঃ বাবা, ওই জুতোর পাটি রাস্তায় ফেলে এলাম? “এই বলে চোর এদিক-ওদিক ভাল করে দেখে নিয়ে বলল, ‘আশেপাশে তো কোনও জনমানব দেখতে পাচ্ছি না, এই গাছের নীচে গোরুটাকে বেঁধে রেখে অপর পাটি জুতো নিয়ে আসি।' এই বলে সে গোরুটিকে গাছের সঙ্গে বেঁধে অপর পাটি জুতো আনতে চলে গেল ।

এদিকে অন্য চোরটি সবই লক্ষ করছিল। সে তখন দেখল তার বন্ধু চোর গোরুকে বেঁধে জুতো আনতে চলে গেল, সঙ্গে সঙ্গে সে গাছ থেকে নেমে মোহার ও গোরু নিয়ে পালিয়ে গেল ।

ওই দুই চোর একই গ্রামে পাশাপাশি বাড়িতে বাস করত। জুতো নিয়ে

এসে গাছের নীচে যখন দেখল তার গোরু ও মোহর নিয়ে কে চম্পট দিয়েছে, সঙ্গে সঙ্গে সে বুঝতে পারল, এ তার বন্ধু চোর ছাড়া আর কেউই হতে পারে না। সে আর এক মুহূর্ত দেরি করল না, তাড়াতাড়ি বন্ধু চোরের বাড়ির সামনে গিয়ে অপেক্ষা করতে লাগল।

যখন গরু আর মোহরের কলসি নিয়ে বন্ধু বাড়িতে প্রবেশ করল, সঙ্গে সঙ্গে সে উঠে দাঁড়িয়ে বলল, 'কী ভালই তো ঠকিয়েছ আমাকে, জুতো আনতে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে মোহরের কলসি নিয়েও চম্পট দিয়েছ?'

অন্য চোরটি তখন বলল, 'তুমি কি কিছুতে কম যাও? সর্বপ্রথম মোহরের কলসি আমি দেখেছিলাম, আর তুমি কিনা মাঝরাতে পুকুরপাড়ে কলসি লুকিয়ে রেখেছিলে।'

তখন এক বন্ধু অন্য বন্ধুকে বলল, দেখো, যা হওয়ার হয়ে গেছে । এখন চলো আমরা দু’জনে সমান ভাগে ভাগ করে নিই।' অন্য বন্ধু হাতে আপত্তি করল না।

মাঝরাতে দুই বন্ধু মিলে মোহার ভাগাভাগি করতে বসল। আধাআধি ভাগ করার পর দেখা গেল একটি মোহর বেশি হচ্ছে, তখন অপেক্ষাকৃত বড় চোরটি বলল, দেখো, এখন তো আর মোহর ভাঙানো সম্ভব নয়, আজ বরং মোহরটি আমার কাছে থাক, কাল সকালে ভাঙিয়ে দু'জনে সমান ভাগ করে নেব।, ছোট চোরটি তার কথা মেনে নিল ।

পরদিন সকালে ছোট চোর বড় চোরের বাড়িতে গিয়ে অবাক হয়ে যায়, দেখে বাড়ির উঠোনে সর্বাঙ্গ চারদ মুড়ি দেওয়া বড় চোর শুয়ে আছে, তাকে ঘিরে তার স্ত্রী-কন্যারা উচ্চস্বরে কাঁদতে লাগল । ছোট চোরকে দেখামাত্র তাদের কান্নার পরিমাণ আরও বেড়ে গেল। ছোট চোর তাদের সামনে গিয়ে জিজ্ঞেস করে, 'কী ব্যাপার, তোমরা কাঁদছ কেন?'

বড় চোরের স্ত্রী আরও উচ্চস্বরে কাঁদতে কাঁদতে বলল, ‘গতকাল রাতে খাওয়াদাওয়ার পর বড় চোরের খুব শরীর খারাপ করে এবং বদ্যি ডাকার আগেই মারা যায়।'

বড় চোরের স্ত্রী কথা শুনে ছোট চোরের মনে কেমন যেন সন্দেহ দেখা দিল । সে বুঝতে পারল এ-সবই পরিকল্পিত, অতিরিক্ত মোহরটি হাতানোর জন্য এরা এমন অভিনয় করছে। ছোট চোর মনে মনে বুঝতে পারলেও মুখে কিছু প্রকাশ করল না, কপট কান্নার অভিনয় করে বলতে লাগল, এমন হবে কে জানত? এখন আমি একা হয়ে গেলাম। বন্ধু তুমি অকালে চলে গেলে, আমি এখন কার সঙ্গে ঘুরব!'

ছোট চোর এইভাবে কিছুক্ষণ কেঁদে বড় চোরের বউকে বলল, 'দেখো তোমরা সবাই মেয়েমানুষ, এখন আমিই তোমাদের মধ্যে বয়স্ক, তোমার

স্বামী আমার বিশেষ বন্ধু, তাই এর সৎকার করার দায়িত্ব আমার। তোমরা বাড়িতেই থাকো, আমি মরা পোড়াবার ব্যবস্থা করছি।' এই বলে ছোট চোর এক গাছা দড়ি দিয়ে বড় চোরের পা বেঁধে টানতে টানতে শ্মশানঘাটের উদ্দেশ্যে নিয়ে চলল।

এদিকে বড় চোরের অবস্থা তখন যায় যায়, প্রাণ আর শরীর থাকতে চাইছে না, অতিকষ্টে নিজেকে সংযত রেখে মড়ার মতো পড়ে রইল, পাছে যদি ছোট চোর জেনে যায় বড় চোের মরেনি, সঙ্গে সঙ্গে অতিরিক্ত মোহরটির ভাগ চাইবে

শ্মশানঘাটে পৌছে ছোট চোরের মাথায় হাত পড়ল। ভুলবশত মরা পোড়াবার কাঠ আনা হয়নি, এখন এই পাণ্ডববর্জিত জায়গায় কোথায় কাঠ পাবে? তখন আর ছোট চোর কী করে? অন্য কোনও মৃতদেহ আসার অপেক্ষায় বড় চোরের পাশে বাঁধা দড়িটার অন্য প্রান্ত বটগাছের উঁচু ডালের সঙ্গে টানটান করে বেঁধে দিল, ফলে বড় চোরের মাথা নিচুতে এবং পা উঁচুতে ঝুলতে থাকে ছোট চোর শ্মশানের পাশের ঝোপে নিজেকে আড়াল করে অপেক্ষা করতে থাকে। একদল ডাকাত ডাকাতির উদ্দেশ্যে শ্মশানঘাটের পথ ধরে পাশের গ্রামে যাচ্ছিল, একটি মড়াকে গাছের ডালে ঝুলতে দেখে এক ডাকাত অন্য ডাকাতদের বলে, 'জানো, পণ্ডিত ব্যক্তিরা কী বলে? শুভকাজে মৃত দর্শন সাফল্যের ইঙ্গিত, আজ যদি না মা কালীর আশীর্বাদে জমিদারের তবিল ফাঁকা করে দিতে পারি, তবে ফেরার পথে ওই মড়াটিকে দাহ করে ফিরব।'

অন্যান্য ডাকাতরা তার কথায় সায় দিয়ে চলে গেল। এদিকে ছোট এবং বড় দুই চোরই ডাকাত দলের কথোপকথন শুনেছিল।

এইভাবে কেটে গেল বেশ কয়েক ঘণ্টা, তারপর শোনা গেল ডাকাত দলের উল্লাস, অর্থাৎ তাদের মনোবাসনা পূর্ণ হয়েছে, তারা তখন শ্মশানে এসে বড় চোরটিকে গাছ থেকে নামিয়ে মাটিতে শোয়াল, তারপর সকল ডাকাত একসঙ্গে করজোড়ে বলতে লাগল, 'ওহে বৃত ব্যক্তি, তোমার দর্শনে আজ আমাদের কাজ সফল হয়েছে, অতএব আমরা তোমার আত্মার সদ্গতি কামনা করি।'

এই বলে ডাকাত দল চিতা সাজিয়ে সেই চিতায় বড় চোরকে শুইয়ে যেই না আগুন দিতে যাবে সঙ্গে সঙ্গে বড় চোর প্রচণ্ড হুঙ্কার দিয়ে চিতার ওপর লাফিয়ে বসল। এদিকে ঝোপের আড়াল থেকে সঙ্গে সঙ্গে এক লাফে ছোট চোর বড় চোরের সামনে উপস্থিত হল। ডাকাত দল তখন ঠকঠক করে কাঁপছে, তাদের মুখমণ্ডল পাশুটে বর্ণ


 দুই চোরের পুরানো মজার গল্প ।  ঠাকুমার ঝুলি । শেষ পর্ব

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ