মুসা (আঃ) এর সাথে শয়তান কেন দেখা করেছিল এবং কি হয়েছিল

আসসালামুয়আলাইকুম ওয়ারাহমাতুল্লাহ, মুসা (আঃ) এর সাথে শয়তান কেন দেখা করেছিল এবং কি হয়েছিল ।

নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, একদিন পাপীষ্ঠ ইবলিশ হযরত মুসা (আঃ) এর কাছে উপস্থিত হয়ে বলল, হে মুসা আল্লাহ তাআলা আপনাকে রিসালাত ও নবুয়তের সন্মানে ভূষিত করেছেন। আপনার সাথে সরাসরি কথা বলেছেন।

হযরত মুসা (আঃ) বললেন, তা অবশ্যই । কিন্তু তোমার উদ্দেশ্য কি? তুমি আমার কাছে কি চাও? এবং তুমি আসলে কে? 

তখন ইবলিশ বলল, হে মূসা! আপনি আপনার প্রভুর কাছে বলুন যে, আপনার একজন মাখলুক তওবা করতে চায় ।

তখন আল্লাহ তাআলা মুসা আলাই সাল্লাম এর নিকট ওহী প্রেরণ করলেন- হে মূসা! তুমি তাকে বলে দাও যে আল্লাহ তাআলা তোমার দরখাস্ত স্রবন করেছেন ।

অতঃপর তাকে হুকুম করো, সে যেন আদমের কবর সম্মুখে সেজদা রত হয় । যদি এভাবে সেজদা করে আদম এর কবরের সামনে, তাহলে আমি ও তাকে কবুল করে নিব । এবং তার সমস্ত গুনাহ মাফ করে দিব ।



হযরত মুসা আলাই সাল্লাম ইবলিসকে এ কথা জানালে, সে ক্রোধে অগ্নিশর্মা হয়ে গেল এবং দম্ভের সাথে বলতে লাগলো, হে মুসা! আমি আদমকে জীবিত থাকতে সিজদা করিনি । আর এখন মৃত্যুর পর আমি তাকে সিজদা করতে পারবোনা ।

তবে যেহেতু আপনি আমার জন্য সুপারিশ করেছেন, তাই আমার উপর আপনার হক এসে গিয়েছে । আপনি যেসব ক্ষেত্রে আমাকে স্মরণ করবেন, অর্থাৎ আমার ব্যাপারে হুশিয়ার থাকবেন ।


যেসব বদ স্বভাবে মানুষের চরম অধপতন ঘটে


  • ১। যখন আপনার রাগ হবে তখন মনে করবেন, ওইটা আমার প্রভাবে হয়েছে যা আপনার অন্তরে প্রভাব ফেলেছে । সে সময় আমার চোখ আপনার চোখের উপর বসানো থাকে এবং সে সময় আমি আপনার রক্তের ভিতর দৌড়াদৌড়ি করতে থাকি ।

  • ২। যখন দুই দল সৈন্য জিহাদে লিপ্ত থাকে, তখন আমি মুজাহিদের কাছে আসি এবং তাদের বিবি বাচ্চাদের কথা তাদের মনে করাতে থাকি । যতক্ষন না পর্যন্ত তারা যুদ্ধের ময়দান থেকে পলায়ন করে ।

দ্বিতীয়বার যখন হযরত মুসা (আঃ) এর সাথে ইবলিশ আবার সাক্ষাৎ করেন হযরত মূসা আলাইহিস সালাম কোথাও যাচ্ছিলেন । তখন ইবলিশ এসে মূসা আলাইহিস সালামকে বলল, আপনার সন্মান আল্লাহর দরবারে অনেক বেশি ।

আমি মুসলিম হতে চাই । মুসা (আঃ) ইবলিশের মাথায় একটা কড়া রংয়ের টুপি দেখতে পেয়ে জিজ্ঞেস করল, এটা কিসের জন্য? ইবলিশ বলল, মানুষের মনোযোগ আকর্ষন করার জন্য মুসা আলাইহিস সালাম তখন ইবলিশ কে জিজ্ঞেসা করলো, 

কি করে মানুষকে কাবু করে ফেলিস?


শয়তান যেভাবে মানুষের ধ্বংস করে দেয়


তখন ইবলিশ বলল, যখন মানুষ আত্নপ্রশংসার ডুবে যায় এবং নিজেকে খুব বড় মনে করে তখন আমি মানুষের কাছে খুব তাড়াতাড়ি পৌঁছাতে পারি । 

আমি আপনাকে তিনটি বিষয়ে সতর্ক করছিঃ- 

১। যে মহিলা আপনার জন্য হালাল নয়, তাকে নিয়ে নির্জনে যাবেন না । কারণ যখন কেউ নির্জনে কোন বেগানা নারীর সাথে যায়, তখন আমি তাদেরকে দিয়ে পাপ কাজ করিয়ে থাকি ।

২। আল্লাহর সাথে অঙ্গীকার করলে তা পূরন করবেন, কারণ যে মানুষ আল্লাহর সাথে অঙ্গীকার করে, আমি তার পেছনে লেগে থাকি । যতক্ষন না পর্যন্ত সে সেই অঙ্গীকার ভঙ্গ না করে এবং তাকে দিয়ে সেই অঙ্গীকার ভঙ্গ করিয়েই ছাড়ি । 

৩। আপনি যখন দান-খয়রাতের জন্য টাকা বের করবেন, তা অবশ্যই খরচ করবেন । কারণ যে দানের জন্য টাকা বের করে । তার পেছনে আমি লেগে যায় যেন সে ওই টাকা হকদার কে না দেয় । এরপর শয়তান তিনবার চিৎকার করে বলল, ধ্বংস ধ্বংস ধ্বংস! এবং সে পালিয়ে গেল । 

আল্লাহতালা এক লক্ষ বৎসর পর পর দুর্গ হতে ইবলিশকে বের করবেন । এবং হযরত আদম আলাইহিস সাল্লাম কেও বাইরে আনা হবে, অতঃপর তাকে সিজদা করার হুকুম করা হবে । তখন ও বার বার ইবলিশ তা করতে অস্বীকার করবে । এই ভাবে তাকে বার বার জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হবে । (ইবনে কাসীর ১১৬২, ইবনে মাজা ৭৩৪৮)


মানুষকে ধোকায় ফেলতে যেসব ক্ষমতা পেয়েছে শয়তান

একইভাবে একদিন হজরত নুহ (আঃ) নৌকায় চড়ার পরে তিনি এক অচেনা বুড়োকে দেখতে পেয়ে জিজ্ঞাসা করলেন, কে তুমি? তখন ইবলিশ বলল আমি শয়তান । নূহ আলাইহি সাল্লাম বললেন, এখানে কেন এসেছ? 

ইবলিশ বলল, আপনার অনুরাগীদের মন-মগজ খারাপ করতে । তাদের দেহ গুলো আপনার কাছে থাকলেও, মন গুলো আমার কাছে আছে ।

হযরত নুহ আলাই সাল্লাম বললেন, ওরে আল্লাহর দুশমন! এখান থেকে বের হয়ে যা । তুই ধ্বংস হয়ে যা । তোরই কারণে ডাঙ্গার মানুষের ডুবে মরেছে । তুই ওদের সর্বনাশ করেছিস । ইবলিশ বলে, আমি কি করতে পারি?

হজরত নুহ আলাই সাল্লাম বললেন, তুই তাওবা কর । ইবলিশ বলে, তাহলে আপনি আল্লাহর তাআলার কাছে জেনে দেখুন তো , যে আমার তওবা কবুল হওয়া সম্ভবনা আছে কিনা? হজরত নুহ (আঃ) তখন আল্লাহর কাছে এ বিষয়ে দোয়া করেন । 

তারপর আল্লাহর পক্ষ থেকে জানানো হয়- ইবলিশ যদি আদম (আঃ) কবরে সিজদা করে, তাহলেই তার তওবা কবুল করা হবে । হজরত নুহ আলাই সাল্লাম শয়তানকে বললেন, তোর তাওবার পদ্ধতি ঠিক হয়ে গেছে । শয়তান বলে কিভাবে? 

হজরত নুহ আলাই সাল্লাম বলেন, ওই যে আদমের কবরে তকে একটু সেজদা করতে হবে । শয়তান বলে, জ্যান্ত আদমকেই আমি সিজদা করিনি । আর এখন মরা আদমকে কিভাবে সেজদা করতে পারি! (দুররুল মানসুর ৩৩৩)

ইবলিশ বলে, আমাকে এখন নৌকা থেকে নামাবেন না। শুনুন এমন পাঁচটি বিষয় আছে, যেগুলোর দ্বারা আমি মানুষকে খারাপ কাজে নিয়ে আসি । সেগুলোর ,মধ্যে তিনটি আমি বলে দিচ্ছি, আর দুটো গোপন রাখছি ।

সে সময় জিবরাইল (আঃ) ওহী নিয়ে এসে হজরত নুহ আলাই সাল্লাম কে বলে, তুমি শয়তাঙ্কে বল মানুষকে কাবু করার যে দুটো জিনিস গোপন রাখতে চাইছে, ওই দুইটি জিনিসের কথা বলতে । 

তখন শয়তান বলে, সেই দুটো জিনিসের মধ্যে একটি হল হিংসা । এর কারণে আমি অভিশপ্ত এবং বিতারিত শয়তান এ পরিনিত হয়েছি । আর দ্বিতীয় জিনিসটা হল লোভ । 

আল্লাহ তাআলা হযরত আদম (আঃ) এর জন্য জান্নাত হালাল করে দিয়েছেন । কিন্তু হযরত (আঃ) চিরকাল জান্নাতে থাকার লোভ করছেন বলে, আমি আমার নিজের উদ্দেশ্য সফল হয়েছি । 

তো সুপ্রিয় দর্শক এ ছিল আমাদের আজকের পোস্ট । পোষ্টটি ভালো লাগলে অবশ্যই শেয়ার করবেন । 


শয়তানের প্রভাব ও প্রতারণা থেকে বাঁচার আমল

শয়তানের প্ররোচনার হাত থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য প্রতিনিয়ত আল্লাহর কাছে সাহায্য চাইবেন, ইস্তেগফার করবেন, এবং সর্ব শ্রেষ্ঠ দোয়াটি হচ্ছে ঃ-

আউযুবিল্লাহি মিনাশ শয়তানির রাজীম

বিতাড়িত শয়তানের তরফ থেকে আমি আল্লাহর কাছে ফানাহ চাই ।

এটি হচ্ছে তাৎক্ষনিক ভাবে শয়তানের হাত থেকে আশ্রয় চাওয়ার শ্রেষ্ট দোয়া ।


একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ